০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে রেকর্ড ছাড়িয়ে বাড়ছে নানা অপকর্ম

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময়: ১১:৫২:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 62

সিলেটে বিগত সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি ও প্রাণীহত্যাসহ রয়েছে নানা অপকর্ম। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা। মাত্র ৫ দিনে সংঘটিত ১১ টি লাগাতার এমন ঘটনার সংবাদ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সিলেটের সর্বত্র। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা তিনটি, ধর্ষনকাণ্ড তিনটি, ডাকাতি দুইটি. খুন তিনটি বিশেষকরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতও কমে গেছে অনেক। একই সাথে অভিভাবক মহলেও বেড়েছে গভীর হতাশা।

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে নগর এলাকার কোনো কোনো স্থানে ও গ্রামে গ্রামে বসানো হয়েছে পাহাড়া। তবুও থামছে না অপতৎপরতা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকাকেও দায়ি করছেন ভুক্তভোগী লোকজন।

ঘটনাপ্রবাহ ২৩ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণকাণ্ড

পৃথক স্থানে পিতার হাতে আপন কন্যা ধর্ষণের দুটি ঘটনা ঘটে সিলেটে। রোববার (২৩ ফেব্রয়ারি) সকালে মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নিজ মেয়েকে (১৫) ধর্ষণের অভিযোগে সাক্কু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। সে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মেয়ে বাদি হয়ে বাবাকে আসামি করে মামলা করেছে। ওই মামলায় সাক্কু মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ভেঙ্গাডোবা গ্রামে।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, তার মা ও বাবা প্রায় ১২-১৩ বছর আগে আলাদা হয়ে যান। এরপর মা বিয়ে করে চলে যান সিলেটে। ফলে মেয়েটি বাবার কাছে থেকেই বড় হয়। তার বাবা সাক্কু মিয়া চারটি বিবাহ করেছেন এবং বর্তমানে সৎ মায়ের সঙ্গে বসবাস করছিলেন।

এদিকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে সিলেটের জৈন্তাপুরে। উপজেলায় নিজ কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে বাবাকে আটক করে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় ১৩ বছর বয়সী কন্যাকে ধর্ষণরত অবস্থায় প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আটক করে তার স্ত্রী। স্থানীয়রা ধর্ষক পিতাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশের হাতে আটক অভিযুক্ত ঐ পিতা কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা। সে পরিবার নিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নে বসবাস করছিল।

২৩ ফেব্রুয়ারি ছাতকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

২৩ ফেব্রুয়ারি ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের দড়ারপার গ্রামে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন গভীর রাতে গৃহকর্তা মাষ্টার আব্দুল আলীর পুত্র,স্বাস্থ্য কর্মী রাজিব মিয়াপরিবার পরিজন নিয়ে একই ইউনিয়নের চেচান গ্রামের শশুর বাড়িতে ছিলেন। তার ভাই সাবেক মেম্বার সুহেল মিয়াও বাড়িতে ছিলেন না। অপর ভাই জুয়েল প্রবাসে থাকেন। ঘটনার সময়  বাড়িতে ছিলেন তাদের বৃদ্ধ পিতা মাষ্টার আব্দুল আলী।এ সুবাদে ফাঁকা বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঘরের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে মাষ্টার আব্দুল আলীকে জিম্মি করে আলমিরাতে থাকা মোট ২ লক্ষ  ১০ হাজার টাকা এবং ঘরে থাকা ২০ ভরি ওজনের স্বর্ণ,জরুরি কাগজপত্র নিয়ে গেছে ডাকাতরা। এ ঘটনায় তাদের ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার।

ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন এরকম একটি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি তবে ভিকটিমের সাথে এখনো কথা বলা যায় নি। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে বিষটোপে ৫০০ হাঁস হত্যা 

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি শিকারিদের রাখা বিষটোপে এক খামারির পাঁচ শতাধিক হাঁস মারা যায়। মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শতাধিক হাঁস। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরের তাহিরপুর উপজেলা অংশের রৌয়া বিলে এই ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় অভিযোগ করেছেন হাঁসের খামার মালিক তাহিরপুর উপজেলার মন্দিয়াতা গ্রামের সুজন মিয়া।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের সুজন মিয়া ঋণ করে বাড়ির পাশে ১১০০ হাঁস দিয়ে একটি খামার করেন। হাঁসগুলো প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার টাঙ্গুয়ার হাওরের রৌয়া বিলে খাবারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। দুপুরে খামারের রাখাল কিছু হাঁস মরে পানিতে ভাসতে দেখেন। এরপর বিল থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক মৃত হাঁস উদ্ধার করা হয়।

মন্দিয়াতা গ্রামের শাহেদ আলীসহ কয়েকজন জানান, একই গ্রামের সাইকুল ইসলামের ছেলে আহাম্মদ মিয়া, জালাল মিয়ার ছেলে জনিক মিয়া ও নুর ইসলামের ছেলে নেহার মিয়া প্রায়ই টাঙ্গুয়ার হাওরের রৌয়াসহ বিভিন্ন বিলে বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার করেন। তাদের বিষ মেশানো ধান খেয়ে খামারি সুজন মিয়ার পাঁচ শতাধিক হাঁস মারা যায় এবং আরও শতাধিক হাসঁ মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন হাওরের পানি ব্যবহার করতেও ভয় হয় স্থানীয়দের।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন,‘ টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি মারার বিষটোপ দিয়ে একজন খামারীর কয়েক শত হাঁস মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইননুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ঘটনা পাঁচটি

ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন

২৫ ফেব্রুয়ারি মোট ঘটনা ঘটে পাঁচটি প্রথম ঘটনাটি ঘটে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। ওইদিন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন বড় ভাই। নিহতের নাম মো. খসরু মিয়া (৩০) তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ভরাউট গ্রামের মনফর আলীর ছেলে। নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত বড় ভাইয়ের স্ত্রী। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয় নিহতের ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করার খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ছোট ভাই মো. কালাম ও বড় ভাই খসরু মিয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় মো. কালাম খসরু মিয়াকে আঘাত করলে তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঠিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে  সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন রোববার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তিনি মারা যান।

দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, জমি ভাগ-বাটোয়ারা করার ব্যাপারে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি জানান, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

নারীর মোবাইল ছিনতাই

২৫ ফেব্রুয়ারি ৩য় ঘটনাটি ঘটে সিলেট নগরীর রিকাবী বাজার পয়েন্ট। ওইদিন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেটে ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী। এসময় উত্তেজিত জনতা ধাওয়া দিয়ে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বর্তমানে সে হাসপাতালে ভর্তি আছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়া থেকে আটক করা হয়। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২য় ঘটনাটি ঘটে রিকাবিবাজার এলাকায় এক নারীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করে ওই ছিনতাইকারী। আটক ছিনতাইকারীর নাম শরিফ আহমদ। সে সিলেটের আখালিয়া এলাকার মকদ্দছ আলীর ছেলে।

পুলিশ জানায় আটককালে শরিফের কাছ থেকে ছুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় জনতা শরিফকে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ছিনতাইকালে ব্যবসায়ী খুন

২৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ঘটনা ঘটে একটি খুনের। ওইদিন রাতে ছাগল বিক্রি করে আসা এক ব্যক্তির টাকা ছিনিয়ে নিতে রাতের আধাঁরে খুন করা হয় এক ব্যবসায়ীকে। পরদিন বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জালালাবাদ থানার ৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফতেহপুরের পীরেরগাঁও নামক গ্রামের এক ঝোপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম সমর আলী (৬৫)। তাঁর বাড়ি একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লালখা গ্রামে। তিনি পেশায় একজন ছাগল বেপারী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রয়ারি) সন্ধ্যা বেলা স্থানীয় পীরেরগাঁও মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন সমর আলী। তারপর তিনি ব্যবসায়ীক কাজে বের হন। এসময় তার সাথে ছাগল বিক্রির ৩৫ হাজার টাকা ছিল। পথিমধ্যে কে বা কারা তার উপর হামলা চালিয়ে খুন করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। জালালাবাদ থানার এসআই জয়ন্ত কুমার দে জানান, নিহতের ডান কাঁধে জখম রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছাগল বিক্রির টাকা ছিনিয়ে নিতে তাকে খুন করা হয়েছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে।

জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুন

২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পঞ্চম ঘটনা ঘটে হাজরাই গ্রামে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মারামারিতে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন মো. রুস্তম আলী (৭০) নামের এক বৃদ্ধ। ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে নিহত রুস্তম আলী (৭০) দক্ষিণ সুরমার হাজরাই গ্রামের কুটু মিয়ার ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল রুস্তম আলীর। সেই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার দুপুর মারামারিতে গুরুতর আহত হন তিনি। আহত রুস্তম আলীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ঘটনা দুইটি

গোলাপগঞ্জে ডাকাতি,আটক ২

২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জে ডাকাতিকালে আন্তজেলা ডাকাতদলের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন জকিগঞ্জের আনন্দপুর গ্রামের কবির আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ আহমদ এবং নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার রানিগাঁ (মাতায়ারা) গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে মো. ফয়সাল হাসান। এরমধ্যে আব্দুল্লাহ আহমদ বর্তমানে জালালাবাদ থানার  পার্কভিউ আবাসিক এলাকার ১৪০নং বাসায় এবং মো. ফয়সাল হাসান আখালিয়া এলাকায় বসবাস করে আসছে।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটে গোলাপগঞ্জ থানাধীন ৩নং ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হিলালপুর গ্রামে। পরে সিলেট-টু-জকিগঞ্জ সড়কের রফিপুর পয়েন্টে চেকপোস্ট পরিচালনা করে আন্তজেলা ডাকাত দলের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার ডাকাত আব্দুল্লাহ আহমদের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানাসহ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় ১টি ডাকাতি, ১টি চুরি ও ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে। অপর আসামি  মো: ফয়সাল হাসান এর বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কতোয়ালি মডেল থানায় আইন-শৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) এ ১টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্যা জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ছিনতাইয়ের শিকার পথচারী মহিলা

২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় চৌহাট্টায় মহিলা কলেজের সামনে ছুরি বের করে এক পথচারী মহিলার ভ্যানেটি ব্যাগ টান দিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টের দিকে দৌড় দিলে স্থানীয় কিছু যুবক এক ছিনতাইকারীকে তাড়া করে আটক করেন। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এসময় স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এসময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। আটককৃত পাভেল (২০) সিলেট নগরীর বাসিন্দা। কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, আটক পাভেল একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেটের সাবেক আহবায়ক মুকির হোসেন চৌধুরী বলেন, চলমান পরিস্থিতির উপর ভর করে আগামী প্রজন্ম হয়ে উঠবে আরো ভয়ঙ্কর। অবক্ষয়ের স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে উঠবে। তবে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সকলের সচেতনতার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন।

সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, দেশে যখন আইনের শাসন কায়েম হয় না, তখন আইনভঙ্গকারী বাহিনী সমাজে আরো ঝেঁকে বসে। যার ফলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। এই অবস্থা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর চাপিয়ে দিলে হবে না। সমাজের সচেতন অংশদের নিজ নিজ তাগিদ থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্যোগ এমনকি পাড়া-মহল্লায় শান্তি ও সামজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলামের সেলফোনে কল দেওয়া হলেও রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।

 

Tag :

Leave a Reply

জনপ্রিয়

জনগণের ভোটেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে: আফরোজা আব্বাস

সিলেটে রেকর্ড ছাড়িয়ে বাড়ছে নানা অপকর্ম

আপডেট সময়: ১১:৫২:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সিলেটে বিগত সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি ও প্রাণীহত্যাসহ রয়েছে নানা অপকর্ম। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা। মাত্র ৫ দিনে সংঘটিত ১১ টি লাগাতার এমন ঘটনার সংবাদ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সিলেটের সর্বত্র। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা তিনটি, ধর্ষনকাণ্ড তিনটি, ডাকাতি দুইটি. খুন তিনটি বিশেষকরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতও কমে গেছে অনেক। একই সাথে অভিভাবক মহলেও বেড়েছে গভীর হতাশা।

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে নগর এলাকার কোনো কোনো স্থানে ও গ্রামে গ্রামে বসানো হয়েছে পাহাড়া। তবুও থামছে না অপতৎপরতা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকাকেও দায়ি করছেন ভুক্তভোগী লোকজন।

ঘটনাপ্রবাহ ২৩ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণকাণ্ড

পৃথক স্থানে পিতার হাতে আপন কন্যা ধর্ষণের দুটি ঘটনা ঘটে সিলেটে। রোববার (২৩ ফেব্রয়ারি) সকালে মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নিজ মেয়েকে (১৫) ধর্ষণের অভিযোগে সাক্কু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। সে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মেয়ে বাদি হয়ে বাবাকে আসামি করে মামলা করেছে। ওই মামলায় সাক্কু মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ভেঙ্গাডোবা গ্রামে।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, তার মা ও বাবা প্রায় ১২-১৩ বছর আগে আলাদা হয়ে যান। এরপর মা বিয়ে করে চলে যান সিলেটে। ফলে মেয়েটি বাবার কাছে থেকেই বড় হয়। তার বাবা সাক্কু মিয়া চারটি বিবাহ করেছেন এবং বর্তমানে সৎ মায়ের সঙ্গে বসবাস করছিলেন।

এদিকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে সিলেটের জৈন্তাপুরে। উপজেলায় নিজ কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে বাবাকে আটক করে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় ১৩ বছর বয়সী কন্যাকে ধর্ষণরত অবস্থায় প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আটক করে তার স্ত্রী। স্থানীয়রা ধর্ষক পিতাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশের হাতে আটক অভিযুক্ত ঐ পিতা কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা। সে পরিবার নিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নে বসবাস করছিল।

২৩ ফেব্রুয়ারি ছাতকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

২৩ ফেব্রুয়ারি ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের দড়ারপার গ্রামে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন গভীর রাতে গৃহকর্তা মাষ্টার আব্দুল আলীর পুত্র,স্বাস্থ্য কর্মী রাজিব মিয়াপরিবার পরিজন নিয়ে একই ইউনিয়নের চেচান গ্রামের শশুর বাড়িতে ছিলেন। তার ভাই সাবেক মেম্বার সুহেল মিয়াও বাড়িতে ছিলেন না। অপর ভাই জুয়েল প্রবাসে থাকেন। ঘটনার সময়  বাড়িতে ছিলেন তাদের বৃদ্ধ পিতা মাষ্টার আব্দুল আলী।এ সুবাদে ফাঁকা বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঘরের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে মাষ্টার আব্দুল আলীকে জিম্মি করে আলমিরাতে থাকা মোট ২ লক্ষ  ১০ হাজার টাকা এবং ঘরে থাকা ২০ ভরি ওজনের স্বর্ণ,জরুরি কাগজপত্র নিয়ে গেছে ডাকাতরা। এ ঘটনায় তাদের ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার।

ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন এরকম একটি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি তবে ভিকটিমের সাথে এখনো কথা বলা যায় নি। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে বিষটোপে ৫০০ হাঁস হত্যা 

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি শিকারিদের রাখা বিষটোপে এক খামারির পাঁচ শতাধিক হাঁস মারা যায়। মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শতাধিক হাঁস। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরের তাহিরপুর উপজেলা অংশের রৌয়া বিলে এই ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় অভিযোগ করেছেন হাঁসের খামার মালিক তাহিরপুর উপজেলার মন্দিয়াতা গ্রামের সুজন মিয়া।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের সুজন মিয়া ঋণ করে বাড়ির পাশে ১১০০ হাঁস দিয়ে একটি খামার করেন। হাঁসগুলো প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার টাঙ্গুয়ার হাওরের রৌয়া বিলে খাবারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। দুপুরে খামারের রাখাল কিছু হাঁস মরে পানিতে ভাসতে দেখেন। এরপর বিল থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক মৃত হাঁস উদ্ধার করা হয়।

মন্দিয়াতা গ্রামের শাহেদ আলীসহ কয়েকজন জানান, একই গ্রামের সাইকুল ইসলামের ছেলে আহাম্মদ মিয়া, জালাল মিয়ার ছেলে জনিক মিয়া ও নুর ইসলামের ছেলে নেহার মিয়া প্রায়ই টাঙ্গুয়ার হাওরের রৌয়াসহ বিভিন্ন বিলে বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার করেন। তাদের বিষ মেশানো ধান খেয়ে খামারি সুজন মিয়ার পাঁচ শতাধিক হাঁস মারা যায় এবং আরও শতাধিক হাসঁ মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন হাওরের পানি ব্যবহার করতেও ভয় হয় স্থানীয়দের।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন,‘ টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি মারার বিষটোপ দিয়ে একজন খামারীর কয়েক শত হাঁস মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইননুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ঘটনা পাঁচটি

ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন

২৫ ফেব্রুয়ারি মোট ঘটনা ঘটে পাঁচটি প্রথম ঘটনাটি ঘটে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। ওইদিন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন বড় ভাই। নিহতের নাম মো. খসরু মিয়া (৩০) তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ভরাউট গ্রামের মনফর আলীর ছেলে। নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত বড় ভাইয়ের স্ত্রী। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয় নিহতের ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করার খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ছোট ভাই মো. কালাম ও বড় ভাই খসরু মিয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় মো. কালাম খসরু মিয়াকে আঘাত করলে তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঠিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে  সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন রোববার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তিনি মারা যান।

দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, জমি ভাগ-বাটোয়ারা করার ব্যাপারে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি জানান, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

নারীর মোবাইল ছিনতাই

২৫ ফেব্রুয়ারি ৩য় ঘটনাটি ঘটে সিলেট নগরীর রিকাবী বাজার পয়েন্ট। ওইদিন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেটে ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী। এসময় উত্তেজিত জনতা ধাওয়া দিয়ে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বর্তমানে সে হাসপাতালে ভর্তি আছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়া থেকে আটক করা হয়। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২য় ঘটনাটি ঘটে রিকাবিবাজার এলাকায় এক নারীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করে ওই ছিনতাইকারী। আটক ছিনতাইকারীর নাম শরিফ আহমদ। সে সিলেটের আখালিয়া এলাকার মকদ্দছ আলীর ছেলে।

পুলিশ জানায় আটককালে শরিফের কাছ থেকে ছুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় জনতা শরিফকে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ছিনতাইকালে ব্যবসায়ী খুন

২৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ঘটনা ঘটে একটি খুনের। ওইদিন রাতে ছাগল বিক্রি করে আসা এক ব্যক্তির টাকা ছিনিয়ে নিতে রাতের আধাঁরে খুন করা হয় এক ব্যবসায়ীকে। পরদিন বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জালালাবাদ থানার ৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফতেহপুরের পীরেরগাঁও নামক গ্রামের এক ঝোপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম সমর আলী (৬৫)। তাঁর বাড়ি একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লালখা গ্রামে। তিনি পেশায় একজন ছাগল বেপারী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রয়ারি) সন্ধ্যা বেলা স্থানীয় পীরেরগাঁও মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন সমর আলী। তারপর তিনি ব্যবসায়ীক কাজে বের হন। এসময় তার সাথে ছাগল বিক্রির ৩৫ হাজার টাকা ছিল। পথিমধ্যে কে বা কারা তার উপর হামলা চালিয়ে খুন করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। জালালাবাদ থানার এসআই জয়ন্ত কুমার দে জানান, নিহতের ডান কাঁধে জখম রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছাগল বিক্রির টাকা ছিনিয়ে নিতে তাকে খুন করা হয়েছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে।

জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুন

২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পঞ্চম ঘটনা ঘটে হাজরাই গ্রামে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মারামারিতে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন মো. রুস্তম আলী (৭০) নামের এক বৃদ্ধ। ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে নিহত রুস্তম আলী (৭০) দক্ষিণ সুরমার হাজরাই গ্রামের কুটু মিয়ার ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল রুস্তম আলীর। সেই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার দুপুর মারামারিতে গুরুতর আহত হন তিনি। আহত রুস্তম আলীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ঘটনা দুইটি

গোলাপগঞ্জে ডাকাতি,আটক ২

২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জে ডাকাতিকালে আন্তজেলা ডাকাতদলের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন জকিগঞ্জের আনন্দপুর গ্রামের কবির আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ আহমদ এবং নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার রানিগাঁ (মাতায়ারা) গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে মো. ফয়সাল হাসান। এরমধ্যে আব্দুল্লাহ আহমদ বর্তমানে জালালাবাদ থানার  পার্কভিউ আবাসিক এলাকার ১৪০নং বাসায় এবং মো. ফয়সাল হাসান আখালিয়া এলাকায় বসবাস করে আসছে।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটে গোলাপগঞ্জ থানাধীন ৩নং ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হিলালপুর গ্রামে। পরে সিলেট-টু-জকিগঞ্জ সড়কের রফিপুর পয়েন্টে চেকপোস্ট পরিচালনা করে আন্তজেলা ডাকাত দলের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার ডাকাত আব্দুল্লাহ আহমদের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানাসহ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় ১টি ডাকাতি, ১টি চুরি ও ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে। অপর আসামি  মো: ফয়সাল হাসান এর বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কতোয়ালি মডেল থানায় আইন-শৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) এ ১টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্যা জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ছিনতাইয়ের শিকার পথচারী মহিলা

২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় চৌহাট্টায় মহিলা কলেজের সামনে ছুরি বের করে এক পথচারী মহিলার ভ্যানেটি ব্যাগ টান দিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টের দিকে দৌড় দিলে স্থানীয় কিছু যুবক এক ছিনতাইকারীকে তাড়া করে আটক করেন। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এসময় স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এসময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। আটককৃত পাভেল (২০) সিলেট নগরীর বাসিন্দা। কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, আটক পাভেল একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেটের সাবেক আহবায়ক মুকির হোসেন চৌধুরী বলেন, চলমান পরিস্থিতির উপর ভর করে আগামী প্রজন্ম হয়ে উঠবে আরো ভয়ঙ্কর। অবক্ষয়ের স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে উঠবে। তবে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সকলের সচেতনতার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন।

সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, দেশে যখন আইনের শাসন কায়েম হয় না, তখন আইনভঙ্গকারী বাহিনী সমাজে আরো ঝেঁকে বসে। যার ফলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। এই অবস্থা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর চাপিয়ে দিলে হবে না। সমাজের সচেতন অংশদের নিজ নিজ তাগিদ থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থার উদ্যোগ এমনকি পাড়া-মহল্লায় শান্তি ও সামজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলামের সেলফোনে কল দেওয়া হলেও রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।