
বিশ্বনাথে দখল দূষণে ক্রমেই বিলীন হচ্ছে উপজেলার সর্ববৃহৎ তিনটি নদী ও একটি খাল। এসব নদী ও খাল দখল হওয়ায় পানি নিষ্কাশন চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমন করে বোরো মৌসুমে নদী ও খালে পানি না থাকায় চাষাবাদে চরম ভোগান্তির শিকার হন উপজেলার ২২ হাজার কৃষক পরিবার। বর্ষায় সুরমা নদী থেকে পানি প্রবেশ করে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ডুবে যায়। আর সে পানি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে কৃষক পরিবারসহ বিভিন্ন স্থরে ক্ষতি হয় প্রায় শত কোটি টাকা। এর কারণ হচ্ছে নদী ও খালগুলো দখল দূষণে বিলীন হয়ে পড়া।
গত বছরের বন্যায় সড়ক, মৎস্য ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ৮২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিআইও প্রজেশ চন্দ্র দাস। এছাড়া বন্যায় ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। চোখের সামনে নদীর চর ও খাল দখল হলেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তাদরে নীরব ভূমিকার কারণে দখলবাজরা অনেকটা নির্দিধায় চালিয়ে যাচ্ছে দখলের প্রতিযোগিতা। তাই আগামী বর্ষায় বন্যায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন ২২ হাজার কৃষক পরিবারসহ উপজেলাবাসী।
উপজেলার তিনটি নদী চরচণ্ডি, বাসিয়া ও মাকুন্দা নদী দখল হওয়ায় এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়েছে। নদীগুলো এখন আর নদী নয়, মরা নালায় পরিণত হয়েছে। ১০ বছরের ভেতর বাসিয়া ও মাকুন্দা নদী দখলমুক্ত না করে খনন করা হয়। এর মধ্যে বাসিয়া নদী খননে দুই খাতে প্রায় ৯ কোটি টাকা ও মাকুন্দা নদী খননে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু খননের পরও নদীগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি এ নদীগুলো ছোট খালের মতো হয়ে পড়েছে। বাসিয়া ও মাকুন্দা নদী শুধু লোক দেখানো খনন হয়েছে। এতে জলে গেছে ২০ কোটি টাকা।
এদিকে চরচণ্ডি নদীটি দখলের কবলে পড়ে নালায় পরিণত হয়েছে। এ নদীটি উপজেলার বাসিয়া থেকে শুরু করে নতুন হাবড়া বাজার, পুরাতন হাবড়া বাজার ও নোয়াগাঁও মার্কেট পর্যন্ত দখল হয়ে পড়েছে।বাসিয়া নদী বিশ্বনাথ সদর, কালিগঞ্জ বাজার, কাহিরঘাট ও কোনারাই বাজরে বিশাল বিশাল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আর মাকুন্দা নদীটির চরে সিঙ্গেরকাছ, বৈরাগীবাজার, আগুগঞ্জ বাজার ও রাজাগঞ্জ বাজারে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল মার্কেট ও দোকান। এমনকি মাকুন্দা নদীর খাজাঞ্চি অংশে নদীর বুকে গড়ে উঠেছে বড় একটি ফুটবল খেলার মাঠ। কিন্তু তিনটি নদী ভূমিখেকোদের দখলে বিলীন হলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
এছাড়া রশিদপুর থেকে রামপাশা বাজার পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের বিশাল আকারের একটি খাল রয়েছে। মাত্র কয়েক বছরে খালটি ভূমিখেকোদের দখলে বিলীন হয়ে গেছে।
খাল উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, তাদের খাল দখলের বিষয়টি জানা নেই, তিনি দেখে বলবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনন্দা রায় বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীগুলো খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর সেই কাজগুলো জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনাতেই হবে বলে জানান।
তবে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ ফোন রিসিভ করেন নি।
জানতে চাইলে বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান বলেন, বাসিয়া নদী ও মাকুন্দা নদী অপরিকল্পিত খননে সরকারের ২০ কোটি টাকা জলে গেছে। এ দুটি নদী পরিকল্পিত খনন না হলে উপজেলাবাসীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কনক চন্দ্র রায় বলেন, বর্ষায় সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করে স্থায়ী স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়। ফলে নদী ও খাল দিয়ে দ্রুত পানি নিস্কাসন না হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় বলে তিনি জানান।
																			
																		
										
																প্রতিনিধি								 









