
সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক ‘আলী আমজদের ঘড়িঘর’ (১৮৭৪ সালে নির্মিত) এর সীমানার ভেতরে—জুলাই শহীদদের স্মরণে—“স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প” নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকৃত প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক স্থাপনার সৌন্দর্য ও গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এমন উদ্বেগে প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিক ১৫১ বছর পুরনো আলী আমজদের ঘড়ি–এর দখলভুক্ত প্রাঙ্গণের সীমানার ভিতরে জুলাই শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ (স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প) নির্মাণ শুরু করা হয়, যা সিলেটবাসীসহ ঐতিহ্য রক্ষাকারীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার বন্যা বয়ে দেয়।
ইতিহাস এবং নগরের প্রতীক হিসেবে স্থান পাওয়া এই ঘড়ির সামনে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্তকে ঐতিহ্যবিরোধী ও সৌন্দর্যহানিকর বলে আখ্যা দেন বহু নাগরিক ও সংগঠন।
প্রতিবাদ ও সংরক্ষণ দাবির উদ্যোগঃ সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার ঘোষণা করেন যে, নির্মাণ কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের জন্য বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কমিটির নেতৃত্বে পুনর্বিবেচনা করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম আশ্বস্ত করেছেন যে ঐতিহাসিক স্থাপনার স্বরূপ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট’, ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’, ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশনকে স্মারকলিপি জমা দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ সরিয়ে অন্য কোথাও স্থানান্তরের দাবি জানান।
এতে প্রাসঙ্গিক আইনি ও সাংস্কৃতিক বকেয়া বিষয় তুলে ধরা হয়—বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব আইন ও জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ নীতির লঙ্ঘনের সম্ভাবনাকে উল্লেখ করা হয় এই স্থাপনাটি তাড়াতাড়ি সরানোর দাবি জানান।
প্রাথমিকভাবে, অনেকেই ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে দাবি করেন যে, সিলেটের এমন একটি গর্বের প্রতীক—আলী আমজদের ঘড়ি—এর নিকটে ঐ ধরনের নতুন স্থাপনা ঢেলে দেয়া উচিত নয়, যখন শহরে স্মরণের জন্য অন্য অনেক জায়গা আছে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া চূড়ান্ত অবশেষে, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানান যে, নির্মাণ কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে, কারণ ব্যাপক সমালোচনা এবং স্মারকলিপি জমা পড়েছে। তিনি বলেন, “কমিটির সঙ্গে পর্যালোচনা করে দ্রুততম সময়ে অন্য কোনো উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করা হবে”।
জেলার প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমও আশ্বাস দিয়েছেন যে, ঐতিহাসিক প্রাচীন স্থাপনার স্বত্ত্বা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিলেটবাসী ও ঐতিহাস্য-প্রেমী মানুষের সদ্ভাবনামূলক প্রতিবাদ এবং সাংগঠনিক চাপে সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসন নির্মাণ কাজ অবিলম্বে স্থগিত রেখেছেন। এটি ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়, যা শহরের নিজস্ব স্বীকৃত প্রতিক—আলী আমজদের ঘড়ি—র উপর সম্মান প্রদর্শন করে।
স্মৃতিস্তম্ভ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা ঐতিহ্যের স্বীকৃতি ও সম্মান বজায় রেখে এমন জায়গায় হওয়াই যুক্তিযুক্ত।